Child Protection

ব্রিটিশ কাউন্সিল বিশ্বাস করে প্রতিটি শিশুর মধ্যেই সম্ভাবনা আছে এবং পৃথিবীর যেখানেই হোক না কেন,  প্রতিটি শিশুই গুরুত্বপূর্ণ । সবকিছুতেই শিশুরা অগ্রাধিকার পাবে যেহেতু  জ্ঞান ও চিন্তা বিনিময়ের ক্ষেত্রে তাদের অনন্য এক সততা এবং আগ্রহ আছে যা ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী একটি অর্থপূর্ণ আস্থার ক্ষেত্র গড়ে তুলতে ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন সাধন করতে সম্ভবপর হবে।

শিশুর সুরক্ষা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব। যে সকল শিশুরা বিভিন্নভাবে আমাদের কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের প্রতি আমাদের মৌলিক কর্তব্যসমুহ সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। আমরা মনে করি তাদেরকে যেকোনো ধরণের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষাও আমাদের কর্তব্য। যেসব দেশে আমরা কাজ করছি সেখানকার শিশু সুরক্ষা আইন এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (UNCRC), ১৯৮৯ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এই লক্ষ্যটি অর্জন করার চেষ্টা করি।  জাতিসংঘ সনদটি একটি আন্তর্জাতিক আইনি অবকাঠামো যা শিশুদের নির্দিষ্ট অধিকার নিয়ে কাজ করে।

শিশুদের ব্যাপারে ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্পষ্ট অবস্থান এই যে প্রতিটি শিশুরই সকল ধরণের নির্যাতন থেকে সুরক্ষা পাবার অধিকার আছে, যা মূলত জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (UNCRC) ১৯৮৯-এর ১৯ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। UNCRC, ১৯৮৯ অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সকল মানবসন্তানই শিশুব্রিটিশ কাউন্সিল শিশু বলে গণ্য করবে, সে যেখানে বাস করছে বা তার দেশে সাবালকত্বের বয়সসীমা যাই হোক না কেন।

আমরা স্বীকার করি যে :

  • শিশুর কল্যাণই সর্বপ্রধান।
  • বয়স, প্রতিবন্ধকতা, লিঙ্গ, নৃতাত্ত্বিক ঐতিহ্য, ধর্মবিশ্বাস, যৌন অভিমত নির্বিশেষে সকল শিশুর সব ধরণের অনিষ্টতা ও সহিংসতা থেকে নিরাপদ থাকার সমান অধিকার আছে।
  • তরুণদের কল্যাণকে উন্নীত করতে হলে শিশু, তরুণ, তাদের বাবা-মা, অভিভাবক এবং শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাসমূহের সাথে অংশীদার হয়ে কাজ করাটা অপরিহার্য।

এই নীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে :

  • এটা নিশ্চিত করতে সাহায্য করা যে ব্রিটিশ কাউন্সিল এ যে সকল শিশু কোনো কার্যক্রমের সাথে অন্তর্ভুক্ত হবে তারা যেন সুরক্ষিত থাকে।
  • শিশু সুরক্ষা বিষয়টি নিয়ে কর্মীদের মাঝে একটি সাধারণ ধারণা তৈরি করা এবং কর্মীদের পরিকল্পনা ও অনুশীলনে সেই নীতি অনুসরণ করতে বলা।
  • শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে যদি কোনো অভিযোগ আসে অথবা কোনো প্রামাণ্য বা সন্দেহপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন একজন কর্মী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে ধাপে ধাপে তাদের পথনির্দেশনা দেয়া।

এই নীতিটি বিশ্বব্যাপী সকল ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক । ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফুলটাইম বা পার্টটাইম, বেতনভুক্ত বা চুক্তিভিত্তিক যেকোনো কর্মীই এই নীতির আওতাভুক্ত। যারা এখানকার সরাসরি কর্মী, উপদেষ্টা, স্বেচ্ছাসেবী, ইন্টার্ন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের পক্ষে  কাজ করছেন এমন যে কাউকেই এই নীতির আওতায় রাখা হবে।

শিশুকে সুরক্ষা দিতে আমরা :

  • তাদের মূল্য দেবো, তাদের কথা শুনবো এবং তাদের যথাযথ সম্মান দেবো।
  • আমাদের কর্মীদের জন্য শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করে এমন ব্যবস্থা ও পদ্ধতি অবলম্বন করবো
  • আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তার সাথে নিয়োগ করবো, এটা নিশ্চিত করবো যে তার ব্যাপারে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
  • কর্মী, শিশু ও তাদের বাবা-মা/ অভিভাবকের সাথে শিশু সুরক্ষা ও তার সুষ্ঠু অনুশীলন নিয়ে তথ্য বিনিময় করবো।
  • শিশুর সুরক্ষা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট শিশু বিষয়ক সংস্থা, বাবা-মাকে জানাবো। সম্পৃক্ত শিশুটির সাথেও এই ব্যাপারে যথাসম্ভব বোধগম্যভাবে কথা বলা হবে।
  • তত্ত্বাবধান, সাহায্য ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের জন্য কার্যকর ব্যবস্থাপনা জ্ঞান সরবরাহ করবো।

এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য আমরা পর্যাপ্ত ও যথার্থ রিসোর্স সরবরাহ করবো এবং নিশ্চিত করবো যে নীতিগুলো সবাই জেনেছে এবং বুঝেছে।

উত্যক্তকরণ বিরোধী নীতি

ব্রিটিশ কাউন্সিল, বাংলাদেশের উদ্দেশ্য আমাদের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ প্রদান করা। কাউকে কোনো ধরণের উত্যক্ত বা বাজে মন্তব্য করা ব্রিটিশ কাউন্সিলে গ্রহণযোগ্য নয়। যদি আপনার শিশুকে কেউ উত্যক্ত করে থাকে বা সে যদি অন্যকে উত্যক্ত হতে দেখে, তাহলে আমরা তাকে উৎসাহী করবো সে যেন এ বিষয়ে তার শিক্ষক বা কাস্টমার সার্ভিস বা আপনাকে সেটা জানায়। যেকোনো ধরণের উৎপীড়নই গুরুত্বের সাথে নেয়া হবে এবং সে ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।   

উত্যক্তকরন কী?

উৎপীড়ন হচ্ছে ইচ্ছা করে এবং বারবার কাউকে আঘাত করা। উত্যক্তকরন বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমনঃ

  • শারীরিক : আঘাত করা, ধাক্কা দেয়া, লাথি মারা, কামড় দেয়া, অন্য শিক্ষার্থীর  জিনিস নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
  • মৌখিক : গালি দেয়া, অন্য শিক্ষার্থীর  ভুলে হাসি-ঠাট্টা করা, অন্যকে বাজে কথা বলা ইত্যাদি।
  • পরোক্ষ : কোনো সহপাঠীকে অবজ্ঞা করা, কারো ব্যাপারে তার সামনেই ফিসফিস করা ইত্যাদি। 
  • সাইবার : মোবাইল ফোনে SMS এর মাধ্যমে বা ইন্টারনেটে সামাজিক নেটওয়ার্ক, ইমেইল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উত্যক্তকরন।

উত্যক্তকরন বিরুদ্ধে সরব হওয়া কেন জরুরি?

শিশুরা এখানে শিখতে আসে এবং সেজন্য শ্রেণিকক্ষে তাদের নিরাপদ বোধ করতে হবে। যদি তারা কোনোকারণে নিজেদের বিপন্ন অনুভব করে  তাহলে তারা শিখতে পারবে না, অথবা ক্লাসে উপস্থিত হতে চাইবে না কিংবা ব্রিটিশ কাউন্সিলেই আসতে চাইবে না। শিশুরা, বিশেষ করে কিশোর বয়সীরা নিজেদের আবেগ ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে সহজেই পীড়ায় ভোগে এবং তাদের সাথে উৎপীড়নমূলক আচরণ করা হলে সেটা তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে যা তাদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশকেও প্রভাবিত করবে।

উত্যক্ত করনের কোন রিপোর্ট করা হলে আমাদের কি করনীয়?

  • যদি আমাদের কাছে উত্যক্তকরন মূলক আচরণের কোনো অভিযোগ আসে, আমরা তৎক্ষণাৎ সে ঘটনাটি নিয়ে কাজ করবো। সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ নেয়া হবে :
  • কোন শিশু উত্যক্ত করনের শিকার হলে ব্যপারটা নিয়ে তার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সহযোগিতা করা হবে। যেমন, সে তার পছন্দের কোনো কর্মীর সাথে তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারবে। সেক্ষেত্রে সে তার পছন্দের কোনো কর্মীর সাথে কথা বলতে পারবে। সেই সাথে এটাও নিশ্চিত করা হবে যে তার  আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার জন্য শিক্ষকের কাছ থেকে সে নিয়মিত সহায়তা পাবে।
  • যে শিক্ষার্থী উত্যক্তমূলক আচরণ করেছে তার সাথেও সহায়তামূলক আচরণ করা হবে। তার সাথে  আলোচনার মাধ্যমে বোঝা হবে যে কী হয়েছে, কেন সে এরকম আচরণ করেছে, তাকে বোঝানো হবে যে তার আচরণটি সঠিক নয় এবং তার বাবা-মা/ অভিভাবকে জানানো হবে যাতে তারা সেই শিক্ষার্থীর আচরণ পরিবর্তনে সহায়তা করেন।

উত্যক্ত করন প্রতিরোধে আমরা কি করি?

  • আমাদের সকল কর্মীদের উতক্তকরন প্রতিরোধে ও শিশু সুরক্ষা নীতি সম্পর্কে অবগত এবং কীভাবে তারা সেই নীতিগুলো অনুসরণ করবে সে ব্যাপারে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ।
  • আমাদের প্রত্যেক কর্মী শিশু সুরক্ষা বিষয়ক কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
  • আমাদের পুরো অফিস ভবন জুড়েই বিভিন্ন ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে আছে। সেখানে শিশু-সুরক্ষা নীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে  আলোকপাত করা হয়েছে।
  • আমাদের সকল শিক্ষার্থী এবং তাদের বাবা-মাকে জানানো হবে উত্যক্তকরন আচরণের ফলাফল কী হবে।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করা  হবে কীভাবে তারা উত্যক্তকরন মূলক আচরণ সম্পর্কে আমাদের জানাবে, এবং আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে একজন শিশু উত্যক্তকরন মূলক আচরণ সংক্রান্ত কিছু জানালে তিনি কীভাবে সেটি সবার দৃষ্টিগোচর করতে সাহায্য করবেন ।

অন্যান্য লিঙ্ক