ট্রান্সফর্মিং ন্যারেটিভস এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও বার্মিংহ্যামের মধ্যে সংযোগ ঘটাবে, এমন সতেরোটি নতুন সৃজনশীল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
ট্রান্সফর্মিং ন্যারেটিভস তিন বছর ব্যাপী একটি প্রকল্প। বার্মিংহ্যামের সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক পেশাজীবী ও সংগঠনের সাথে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শিল্পী ও সংগঠনের সৃজনশীল আদানপ্রদানে সহযোগীতা করবে এই প্রকল্প। এই প্রকল্প যেমন নবীন শিল্পীদের আত্মপ্রকাশের জায়গা দেবে তেমনি তিনটি দেশের শিল্পীদের সমসাময়িক অভিব্যক্তি ও ভাবনা বিনিময়ের সুযোগ করে দেবে। ২০২২ সালে বার্মিংহ্যামে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ গেমসের প্রাককালে এই প্রকল্প দেশ তিনটির মধ্যে অর্থপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের সূচনা করবে। কালচার সেন্ট্রালের পরিচালনা, আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ডের সহায়তা ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
ভিজ্যুয়াল আর্টস, সঙ্গীত, নৃত্য, থিয়েটার ও সম্মিলিত শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আয়োজিত এই প্রকল্পগুলোকে মোট ৭৫ হাজার ইউরো প্রদান করা হবে। ২০২০ সালের গ্রীষ্ম ও শরৎকাল জুড়ে আঠারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রতিটি প্রকল্প ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শিল্পী, সৃজনশীল সংগঠন এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও বার্মিংহ্যামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে।
যে প্রকল্পগুলো সমর্থন পাচ্ছে সেগুলো হলো:
ডিসটোপিয়া
ডিসটোপিয়া প্রকল্পটি বৈশ্বিক মহামারির সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক এবং তার পরবর্তী ফলাফলের ওপর আলোকপাত করবে। সমতা ও অবিচারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হবে। বার্মিংহ্যাম মিউজিয়াম ট্রাস্ট (বিএমটি) এর সাথে অংশীদার হয়ে বিএলকেবিএক্সের নাফিস আহমেদ (ঢাকা, বাংলাদেশ) এবং বার্মিংহ্যামের একজন নির্বাচিত শিল্পী যথাক্রমে ঢাকা ও বার্মিংহ্যামে তাদের ভিন্নতর অভিজ্ঞতা ইন্টারডিসিপ্লিনারি নতুন শিল্পমাধ্যমে ফুটিয়ে তুলবেন। দুইটি শিল্পকর্মই বিএমটি-র লাইফ ইন লকডাউন প্রকল্পের ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নেবে এবং বেশ কিছু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একই সময়ে প্রদর্শিত হবে।
আমি তোমাকে চিনি না, তুমি আমাকে চেনো না
শেহজাদ চৌধুরি (ঢাকা, বাংলাদেশ) ও মাহতাব হোসেনের (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য) একটি যৌথ প্রকল্প যার ব্যপ্তি তিন মাস। প্রতি সপ্তাহে এই দুইজন শিল্পী পারষ্পরিক আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে নিজেদের পছন্দসই মাধ্যমে একটি করে শিল্পকর্ম প্রস্তুত করবেন । বারোটি বিশেষ বিষয়বস্তু অবলম্বনে শিল্পকর্মগুলো তৈরি করা হবে। বিষয়বস্তুর মধ্যে কর্ম, ধ্যান, পুষ্টি, পুরুষত্ব, শরীরের লোম, গায়ের রঙ ইত্যাদিসহ যে কোনো কিছু থাকতে পারে।
আ ওয়াক উইথ মাই ইমেজিনারি ফ্রেন্ড
দূরে থাকা দর্শকের সাথে শিল্পীর সংযোগ বিষয়ক প্রকল্পটি “আমরা সবাই একই গোলকে আছি” এই ধারণাকে খতিয়ে দেখবে। এই প্রকল্পের শিল্পীরা, ড. শায়েখ মোহাম্মদ আরিফ (ঢাকা, বাংলাদেশ), মকবুল চৌধুরি (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য), সৈয়দ ওয়াসিম হায়দার (লাহোর, পাকিস্তান), নুজহাত তাবাসসুম (ঢাকা, বাংলাদেশ) এবং অজিবর রহমান (গাজিপুর, বাংলাদেশ) পরষ্পরের শহরকে প্রত্যুত্তর দেবেন স্থানীয়ভাবে ধারণকৃত শব্দগুচ্ছ ও সরাসরি আঁকা ছবির মাধ্যমে।
শক্তি
সংস্কৃত ভাষায় শক্তি বলতে নারীর ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। শ্রীপুর গ্রাম (গাজিপুর, বাংলাদেশ) ও সম্পদ (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য) এর যৌথ উদ্যোগ শক্তি। বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নারীদের প্রথাগত শিল্পকর্ম ও কাজের ধাঁচের সঙ্গে বার্মিংহ্যামের শহুরে নকশার শিল্পকর্মের আদানপ্রদান নতুন ধরনের শৈল্পিক বিন্যাস ও সমসাময়িক অভিব্যক্তি প্রকাশের পথকে সুগম করবে।
অঙ্গন
অঙ্গন একটি ইন্টারেক্টিভ ধারাবাহিক পডকাস্ট। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক পেশাজীবীদের সঙ্গে বার্মিংহ্যামে এই দেশগুলোর ডায়াস্পোরা সম্প্রদায়ের সংলাপ ও নতুন সংযোগ তৈরির আহ্বান জানায় এই উদ্যোগ। এতে অবদান রাখবেন লেখক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা। পডকাস্টের তত্ত্বাবধায়নে যে শিল্পীরা থাকবেন তারা হলেন মাসুমা হালাই খোয়াজা (করাচি, পাকিস্তান), নাফিস আহমেদ (ঢাকা, বাংলাদেশ), সামিরা সায়েদ (ঢাকা, বাংলাদেশ) এবং আই অ্যাম করাচি-র আমব্রিন থম্পসন (করাচি, বাংলাদেশ)।
সংস অভ সলিট্যুড (এসওএস)
সঙস অভ সলিট্যুড (এসওএস) সুরকার আরিব আজহার, আর্ট লঙ্গার (ইসলামাবাদ, পাকিস্তান) এবং কালাবোরেশন আর্টস (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য) এর একটি ক্রস-প্ল্যাটফর্ম প্রয়াস। পাকিস্তানে বসবাসরত একটি খ্রিস্টান পরিবার ও বার্মিংহ্যামের একটি অভিবাসি পাকিস্তানি পরিবারের না বলা গল্পগুলো নিয়ে এই উদ্যোগ সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় কাজ করে। সংখ্যালঘু হিসেবে বাস করার অনন্য অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে দুইটি পরিবারের সাদৃশ্যের পাশাপাশি লকডাউন ও তার প্রভাবের সাথে তাদের মানিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা তুলে ধরবে এই প্রকল্প।
ঢাকা সে করাচি
ঢাকা সে করাচি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে সঙ্গীত, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক দর্শনে সমৃদ্ধ বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা পরিবেশন করবে। এই চলচ্চিত্রের মৌলিক আবহসঙ্গীত কালজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পাকিস্তানের জাতীয় কবি আল্লামা ইকবালের কাজ থেকে অনুপ্রাণিত। প্রযোজক আহসান বারি (করাচি) ও শেখ দিনা (ঢাকা, বাংলাদেশ)।
হাল-এ-রাক্স
নৃত্যশিল্পী ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব উযমা আশরাফ এবং এলিনা চৌধুরি (লাহোর, পাকিস্তান) কাজ করবেন গৌড়ীয় নৃত্যশিল্পী র্যাচেল পেরিস (ঢাকা, বাংলাদেশ) ও লাহোরের উপশহর কামাহান এলাকার শিশুদের নিয়ে। প্রথাগত কত্থক ও গৌড়ীয় নাচকে কবিতা ও স্থানীয় লোকগাঁথার সমন্বয়ে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা হবে। আর্থসামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরতর শৈল্পিক ধারণা ও অভিব্যক্তি অর্জন এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
ম্যাপিং মেমরি
এই প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন শাহীন আহমেদ (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য), জাফরিন গুলশান (ঢাকা, বাংলাদেশ) ও সাবা খান (লাহোর, পাকিস্তান)। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ভূমি হারানো ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যক্তিগত ইতিহাস স্মরণ ও সংকলিত করা। এই প্রকল্প দেশের বড় বড় ক্ষতগুলো ব্যবচ্ছেদ করে অভিবাসন ও যৌথ ইতিহাসের উপর সেগুলোর প্রভাব বোঝার চেষ্টা করবে।
বাসি খবর
ভুলে যাওয়া খবর নিয়ে একটি প্রকাশনা বাসি খাবরাইন / বাসি খবর (উর্দু ও বাংলায় ‘পুরনো খবর’)। ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টোরিটেলার ও সাংবাদিক ফাহাদ নাভিদ (করাচি, পাকিস্তান) এবং রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (ঢাকা, বাংলাদেশ) যথাক্রমে করাচি ও ঢাকায় খবরের কাগজের কাটিং সংগ্রহ করে মহামারিকালীন সময়ের দ্রুতচলা সংবাদচক্র ও ব্রেকিং নিউজের বিভিন্ন দিকের উপর আলোকপাত করবেন।
সাফার সুরো কা
এই বিশেষ প্রকল্পটি প্রথিতযশা ও নবীন সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করবে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের শিল্পীরাও এতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। বাংলা, উর্দু ও ইংরেজিতে সৃজনশীল ধারণার সঙ্গীত, কবিতা, ডিজিটাল সংলাপ, কর্মশালা ও গান/মিউজিক ভিডিওর সমন্বয়ে এই আন্তঃসাংস্কৃতিক প্রদর্শনীতে স্থান পাবে মেধাবীদের সৃজনশীলতা এবং এই অঞ্চলের সঙ্গীতের অসাধারণ ঐতিহ্য, যা উভয় সংস্কৃতিরই বৈশিষ্ট্য। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মাঝে আছেন ওয়াকাস আলমাস (করাচি, পাকিস্তান) এবং লাবিক কামাল (ঢাকা, বাংলাদেশ)।
ওয়ার্ডস, সাইনস এন্ড ফটো ডিরেক্টরি
লকডাউন থেকে উঠে আসা নতুন চিহ্নগুলো নিয়ে একটি ভিজ্যুয়াল অভিধান বানাবেন বার্মিংহ্যাম ভিত্তিক আলোকচিত্রী রিংকু বারপাগা এবং আলি নূরানী (করাচি, পাকিস্তান)। একত্রে তারা বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরবেন কোভিড-১৯ সংকট সংক্রান্ত এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অসমতার চিত্র।
নিউ ন্যারেটিভ্স
গ্রেইন প্রজেক্টস (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য) পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট ও তাসভির ঘার (লাহোর, পাকিস্তান) বা ছবিঘরের সাথে এক হয়ে আর্টিস্ট এক্সচেঞ্জ আয়োজন করবে, যেখানে শৈল্পিক বিনিময়, প্রকাশনা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। চারজন আলোকচিত্রী তাদের শহর, পরিবেশ, পরিবার, ঐতিহ্য ও সম্প্রদায় নিয়ে নতুন কাজ করবেন। এই কাজগুলো হবে ২০২০ সালের স্থান ও কালের প্রতিফলন। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রতিকূলতা ও তা থেকে উত্তরণের বিভিন্ন ধাপও এখানে স্থান পাবে।
গালি যাইন
গালি অর্থাৎ উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি ও বাংলায় রাস্তার গলি। দক্ষিণ এশিয়ার সৃজনশীল কণ্ঠগুলোকে স্থান করে দিতে ম্যাগাজিন প্রকাশ করবে এই প্রকল্প। মারিয়া ওয়াসিমের মতো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিল্পীদের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করবে গালি যাইন। এই প্রকল্প বার্মিংহ্যামের ডায়াসপোরা সম্প্রদায়কে কল্পিত মাতৃভূমির বদলে বাস্তবের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ করে দেবে। গালি যাইনের প্রকাশনায় থাকছেন নাফিসা হামিদ, কামিল মাহমুদ ও রুপিন্দর কর (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য)।
মিরর ইফেক্ট
মিরর ইফেক্ট বাংলাদেশ ও বার্মিংহ্যামের অল্পবয়স্ক মেয়েদের ভেতর পারষ্পরিক আদানপ্রদানের একটি মাধ্যম যা নাগরিক জীবন ও নারীর লিঙ্গপরিচয় সম্পর্কে সচেতন। এই অংশগ্রহণমূলক প্রকল্পটি ১৩-১৮ বছর বয়সী ২০জন মেয়েকে নিয়ে কাজ করবে। বার্মিংহ্যাম রেপার্টরি থিয়েটার, কমলা কালেক্টিভ (লন্ডন, যুক্তরাজ্য) ও টুগেদার উই ক্যান (বাংলাদেশ) এই প্রকল্পের যৌথ উদ্যোক্তা।
উন্ম্যুটেড
ওপেন থিয়েটার (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য) শেখার অক্ষমতা আছে এমন তরুণদের নিয়ে কাজ করে যাতে গুণগত শিল্পকর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের অনন্য সৃজনশীলতার প্রতিফলন ও উদপাযন করা সম্ভব হয়। ওপেন থিয়েটার লাহোর, পাকিস্তানের থিয়েটার ও পারফর্মিং আর্টস বিষয়ক সংগঠন এমএএএস ফাউন্ডেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে। একসাথে তারা শৈল্পিক বিনিময় এবং উভয় দেশের তরুণদের জন্য অনলাইনে সৃজনশীল কর্মশালার আয়োজন করবে। এতে করে তরুণেরা তাদের নিজ নিজ শিল্পকর্মে পারফর্মেন্স আর্ট, মাইম, ভিজ্যুয়াল আর্ট ও আলোকচিত্র ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।
কোলাবোরআর্টিস্টস
রেবেল ক্রিয়েটিভস (বার্মিংহ্যাম, যুক্তরাজ্য) এর প্রযোজনায় কোলাবোরআর্টিস্টস একটি অনুপ্রেরণামূলক প্রকল্প। এটি বার্মিংহ্যাম, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সাতজন মেধাবী, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক পেশাজীবীকে একত্র করবে। শিল্পীরা কথা বলবেন বৈশ্বব্যাপি মহামারির ফলে বিচ্ছিন্নতা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নতুনভাবে কাজ শুরু করার অভিজ্ঞতা নিয়ে। ছয়জন শিল্পী ভিজ্যুয়াল আর্ট, স্পোকেন ওয়ার্ড ও খোলাখুলি আলোচনার মধ্য দিয়ে একত্রিত হয়ে কাজ করার ইতিবাচক শক্তি ও ডিজিটাল স্টোরিটেলিং-এর ভবিষ্যৎ তুলে ধরবেন। প্রতিটি কাজ স্বতন্ত্র হলেও সবগুলো মিলে একটি শক্তিশালী আখ্যান উপস্থাপন করবে।