আজ ঢাকা ও গাজীপুরের পিটিআই এ অনুষ্ঠিত হলো ট্রেনিং অব মাস্টার ট্রেনার ইন ইংলিশ’(টিএমটিএ) প্রকল্পের প্রথম গ্রুপের ৮৮ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সমাপনি অনুষ্ঠান। এটি ব্রিটিশ কাউন্সিল ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি যৌথ প্রকল্প।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জিএম হাসিবুল আলম। সরাসরি উপস্থিতিতে ও ভার্চুয়ালভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম।
প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ছিলেন এই প্রকল্পের প্রথম গ্রুপ। পেশাগত বিকাশের লক্ষ্যে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা ও গাজীপুরের পিটিআইয়ে ১৪ সপ্তাহব্যাপী এ প্রশিক্ষণটি শুরু করেন তারা। কিন্তু লকডাউনের কারণে অনেক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকায়, এ প্রশিক্ষণ ২০ সপ্তাহে সম্প্রসারিত হয়। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দূরে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শিক্ষকগণ লক্ষ্যের প্রতি মনোনিবেশ করে আন্তরিকতার সাথে তাদের কোর্স সম্পন্ন করেন।
কয়েক মাসব্যাপী তাদের কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ আজ তাদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়।
টিএমটিএ প্রকল্পের ইংরেজি ভাষা নিরীক্ষণের মাধ্যম হিসেবে, ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌলিক ইংরেজি জ্ঞান পরীক্ষার জন্য ৩,০০০ এরও বেশী অ্যাপটিস টেস্ট গ্রহণ করে। প্রাথমিকভাবে এই টেস্টটি মুখোমুখিভাবে নেওয়ার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ এর প্রকোপের ফলে ব্রিটিশ কাউন্সিলকে সেই চিন্তা থেকে সরে এসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরীক্ষাগ্রহনের ব্যাবস্থা নিতে হয়। এমওপিই, ডিপিই, এবং গ্লোবাল এসেসমেন্ট অপারেশন টিমের সহায়তায় ব্রিটিশ কাউন্সিল সম্পুর্ন ঘরে বসে অনলাইনে এই টেস্ট দেয়ার ব্যবস্থা করে। ৯৪ শতাংশের বেশি প্রশিক্ষনার্থী এ২ বা তার বেশি স্কোর অর্জনে সক্ষম হয় এবং সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আইটি বিষয়ক সমস্যা সমাধান করা হয় যা তাঁদের এই টেস্ট সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল গতকাল ঢাকা ও গাজীপুরের পিটিআইয়ে মুখোমুখিভাবে আবারও এপটিস টেস্ট গ্রহণ করে যাতে ৮৮ জন প্রশিক্ষণার্থীই অংশগ্রহণ করেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিল ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশজুড়ে আরও পিটিআই’তে প্রাথমিক শিক্ষকদের পরবর্তী দলের প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারনে সৃষ্ট সকল প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও এই ট্রেনিং এ অংশগ্রহন করার জন্য সকল শিক্ষককে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। এছাড়া আমি সকল ট্রেইনার ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের একাগ্র প্রচেষ্টাকেও স্বাগত জানাচ্ছি কারন সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা এই সমাপন অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে এগিয়ে গেছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মানসম্মত শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপদ্ধতির মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বরাবরই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পিইডিপি৪ ইংরেজি শিক্ষায় দক্ষ শিক্ষকদের একটি পুল তৈরির উদ্দেশ্যে কিছু পদ্ধতিগত ব্যাবস্থা প্রবর্তন করেছিল যার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের এই দক্ষতা অন্য শিক্ষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সন্তানদের সুশিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। আমি আশা করি ট্রেনিং অব মাস্টার ট্রেনার ইন ইংলিশ প্রকল্পটি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে।’
‘টিএমটিই প্রকল্পের প্রথম গ্রুপে অংশ নেওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি সফলতার সাথে তাঁদের ট্রেনিং সম্পন্ন করার জন্য। আজ আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেসকল শিক্ষকদের আমাদের সামনে দেখছি যারা ইংরেজি ভাষা ও আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। আগামী বছরগুলোতে আমরা আরও অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই ট্রেনিং প্রকল্পের আওতায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তাঁদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখবেন যার ফলে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হওয়াকালীন তারা ইংরেজিতে আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। নিঃসন্দেহে ইংরেজিতে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম তাঁদের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে এই প্রকল্পে জড়িত হতে পেরে আমরা গর্বিত।’ বলেন টম মিশশা, ডিরেক্টর বাংলাদেশ, ব্রিটিশ কাউন্সিল।
এই ট্রেনিং এ অংশগ্রহন করা টঙ্গীবাড়ি মডেল সরকারি পারথমিক বিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জের সহকারি শিক্ষক মোঃ আসলাম হোসেইন বলেন, ‘এই ট্রেনিং এর মাধ্যমে শিক্ষাপদ্ধতি আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রি ও শিক্ষকদের মধ্যে একটি উন্নত বন্ধন গড়ে তোলার পদ্ধতি জানতে পেড়েছি আমরা। এই ট্রেনিং এ অংশ নিয়ে আমি গর্বিত। এই প্রকল্পটি ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ডিপিই এর এক যৌথ উদ্যোগের ফসল।’