সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি – এই তিন প্রতিপাদ্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের সকল কাজের মধ্যে অন্তর্নিহিত। বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কাজের নানান ধারা; শিল্প, সমাজ, শিক্ষা এবং ইংরেজি শিখন ও পরীক্ষা গ্রহণের মধ্যে সবসময়ই এর প্রতিফলন রয়েছে। আমাদের উদ্যোগগুলো বিভিন্ন ধারার মানুষদের একত্র করার পাশাপাশি তাদের অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করে, যা পরবর্তীতে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে নেতৃত্ব প্রদান করে।
ডিজেবিলিটি আর্টস ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী শিল্পী, প্রতিবন্ধী শিল্পী-চালিত সংগঠন এবং অন্তর্ভুক্তি-বিশ্বাসী শিল্প সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা ক্রমাগত পরিবর্তনের একটি ধারা তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছি। .
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে আমরা যুক্তরাজ্য এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলসমূহের যৌথ অংশীদারিত্বে করা ডিজ্যাবিলিটি আর্টস-কেন্দ্রিক কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ তুলে ধরছি –
· নেপাল
ডিজেবিলিটি অ্যাকসেসিবিলিটি গাইড ডকুমেন্ট: ‘বিয়ন্ড দ্য নর্ম’
গত পাঁচ বছর ধরে ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতিবন্ধী শিল্পক্ষেত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব সাগর প্রসাই-এর সাথে কাজ করেছে। যৌথ সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক মেধা এবং জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে এই কাজগুলি সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের অক্টোবর মাসে উৎসব এবং শিল্প সংগঠকদের জন্য একটি নতুন টুলকিট বানিয়েছেন প্রসাই। “ডিজেবিলিটি অ্যাকসেসিবিলিটি গাইড ডকুমেন্ট: বিয়ন্ড দ্য নর্ম” নামক এই অন্তর্ভুক্তিমূলক পুস্তিকাটি ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাথে প্রসাই-এর দীর্ঘদিন নেপালে বিভিন্ন শিল্প উৎসব এবং আনলিমিটেড ফেস্টিভ্যালে কাজ করার একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
· চীন
৫ম যুক্তরাজ্য-চীন ডিজেবিলিটি আর্টস ফোরাম
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে ব্রিটিশ কাউন্সিল ৫ম যুক্তরাজ্য-চীন ডিজ্যাবিলিটি আর্টস ফোরামের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই বছর, যুক্তরাজ্যের বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন – বার্ডস অফ প্যারাডাইজ থিয়েটার কোম্পানির আর্টিস্টিক ডিরেক্টর সফটলি গেইল, ফেং লিং প্রোডাকশন্সের প্রতিষ্ঠাতা ফারুক চৌধুরী, রয়াল এক্সচেঞ্জ থিয়েটারের রেসিডেন্ট সহযোগী পরিচালক নিকি মাইলস-উইল্ডিন এবং অভিনেতা টমি জেসপ। এই ফোরামটি চীন এবং যুক্তরাজ্যের যৌথ উদ্যোগে করা বিভিন্ন ডিজেবিলিটি আর্টস প্রকল্পকে তুলে ধরার একটি প্রয়াস।
· ভিয়েতনাম
অ্যাকসেসিবিলিটি জার্নি থ্রু আওয়ার প্লেসেস ইন স্পেস
ইউকে/ ভিয়েতনাম সিজনের অংশ হিসেবে আট কিলোমিটার বিস্তৃত ‘আওয়ার প্লেস ইন স্পেস’ প্রদর্শনীটি যেনো সৌরজগতকে হ্যানয়ে-এর কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে! শিল্পী অলিভার জেফারস এবং বিজ্ঞানী প্রফেসর স্টিফেন স্মার্ট-এর নকশায় সৃষ্ট এই আলোচিত স্থাপত্য-প্রবাহ সর্বস্তরের দর্শকের উপভোগের জন্য এক অন্তর্ভুক্তিমূলক যাত্রা নিশ্চিত করেছে। সেই সাথে এই উদ্যোগটি STEAM-ভিত্তিক শিখন তুলে ধরতেও সহায়তা করেছে, এবং দর্শকদের সৌরজগতের একটি আনুপাতিক মডেল দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
· ভারত
"ওয়েস্টল্যান্ড: এ জার্নি"
জন সংস্কৃতি এবং গ্রেআই, যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় প্রতিবন্ধী-শিল্প পরিচালিত থিয়েটার সংস্থার যৌথ উদ্যোগে “ওয়েস্টল্যান্ড: এ জার্নি” প্রদর্শনীটি ভারত/যুক্তরাজ্য সিজনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে। সঞ্জয় গাঙ্গুলী, জেনি সিলি এবং টিম হুইলার পরিচালিত এই নাটকটি সংস্কৃত মহাকাব্য ‘মহাভারত’; বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এবং টি এস এলিয়ট রচিত বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিল্পকে আবিস্কার করেছে। এই নাটকটি জন সংস্কৃতি’র প্রতিবন্ধী শিল্পীদের সাথে করা প্রথম কাজ, যা ভারতে প্রতিবন্ধী শিল্প পরিচালিত থিয়েটার অঙ্গনে একটি মাইলফলক।
· বাংলাদেশ
"নৈঃশব্দ্যে ‘৭১" (’71 in Silence)”
"নৈঃশব্দ্যে ’৭১" ব্রিটিশ কাউন্সিলের DARE (Disability Arts Redefining Empowerment) প্রকল্পের একটি উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী। রমেশ মেয়াপ্পান পরিচালিত ৩০ মিনিটের এই থিয়েটার আয়োজনে ১৫জন প্রতিবন্ধী শিল্পী ফিজিকাল স্টোরিটেলিং-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গল্পকে তুলে ধরেছে। ডেয়ার-এর লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী-শিল্পক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস গঠনে সহায়তা করা এবং প্রচলিত সামাজিক কুসংস্কারকে প্রতিহত করার মাধ্যমে ডিজেবিলিটি আর্টসের জন্য একটি স্থায়ী প্লাটফর্ম নির্মাণ করা।
· অস্ট্রেলিয়া
"দ্য ড্যান ড শো" অ্যাট ওয়ার্ল্ড প্রাইড ২০২৩
সিডনি ওয়ার্ল্ড প্রাইড ২০২৩-এর অংশ হিসেবে ব্রিটিশ কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া প্রদর্শন করেছে – “দ্য ড্যান ড শো”। এই পারফরমেন্সটি লজ্জা এবং গর্বের একটি টানাপোড়েনময় সম্পর্ক তুলে ধরেছে – যা ড্যান ড’র আত্মোপলব্ধি থেকে অনুপ্রাণিত। ড্যান ড ক্রিয়েটিভ প্রজেক্টস একটি প্রতিবন্ধী-পরিচালিত সংস্থা যা বিভিন্ন সংস্থা এবং শিল্পীদের অংশগ্রহণে ক্রমবর্ধমান একটি নেটওয়ার্কের সাথে অভিনব পারফরমেন্স পরিকল্পনা করে থাকে যা থিয়েটার এবং নৃত্যের মাঝের বিভেদ নিষ্প্রভ করে।
· মালয়েশিয়া
ইনক্লুসিটি, থিংকসিটি’র ক্রিয়েটিভ কে এল আর্বান চ্যালেঞ্জের ফাইনালিস্টদের অন্যতম
২০২২ সালে মালয়েশিয়ার নাকসেনি আর্টস অর্গানাইজেশনের আরমানি শাহরিন আনলিমিটেড ফেস্টিভালে ব্রিটিশ কাউন্সিলকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। সেই অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা শাহরিনকে বিভিন্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকল্প, কর্মশালা এবং ইভেন্ট পরিচালনার উদ্যোগ নিতে অনুপ্রাণিত করেছে। শাহরিনের সহ-নির্মাণে নির্মিত দ্য ইনক্লুসিটি প্রজেক্টের লক্ষ্য লন্ডন এবং সিংগাপুরের মত কুয়ালালামপুর শহর জুড়ে প্রবেশগম্য ভেন্যুর একটি জননির্মিত তালিকা তৈরি করা। বর্তমানে ইনক্লুসিটি থিংকসিটি’র ক্রিয়েটিভ কে এল আর্বান চ্যালেঞ্জের ফাইনালিস্ট, যার ২০২৪-এর শুরুতে প্ল্যাটফর্মটি চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। শাহরিনের এই উদ্যোগটির লক্ষ্য শুধু প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মাঝেই নয়, বরং বৃহত্তর মালয়েশীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে অন্তর্ভুক্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়া।